যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে অনলাইন বিজনেস দিনদিন বাড়ছে। প্রতিটি ব্যাবসায়কে অনলাইনে বিক্রির প্রচেস্টা চালানো হচ্ছে। আমরা অনেকেই জানিনা, আমাদের বাংলাদেশে অনলাইন বিজনেসের ভবিষ্যৎ কি হতে যাচ্ছে! সকল অনলাইন ব্যাবসায়ই যে সফল হচ্ছে সেটা কিন্তু বলা যাবেনা। আপনার চিন্তা যদি হয়,অনলাইন ব্যাবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা,তবে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাদেশে অনলাইন বিজনেস ও ভবিষ্যৎ |
যারা অনলাইন ব্যাবসায় শুরু করে,বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা কাউকে না কাউকে নকল করে ব্যাবসায় দেয়। তখন যিনি আগে বাজারে এসেছেন, হয় তিনি পন্যের দাম হ্রাস করে বিক্রি চালিয়ে যান,নয়তো নতুন বাজারে আসা ব্যাক্তির কাছে হেরে বসেন। ফলে বর্তমান বাজারে অনলাইন ব্যাবসায়ীদের মধ্যে প্রচুর প্রতিযোগিতা রয়েছে। আপনাকে এই ব্যাবসায় আসতে হলে,প্রচুর ধৈর্য থাকতে হবে। একই সাথে সোস্যাল মিডিয়া ব্যাবহারে পারদর্শীতার পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে পূর্নাঙ্গ জ্ঞান থাকতে হবে।
আপনি যদি নতুন কোন আইটেম নিয়ে অনলাইন ব্যাবসায় আসতে পারেন,যা মানুষ কিনতে চায় কিন্তু হাতের কাছের দোকানা বা মার্কেটে সহজলভ্য নয়। সেই পন্য নিয়ে কাজ করলে আপনি অল্প সময়ে সফলতার মুখ দেখতে পাবেন। তবে এটা মাথায় রাখতে হবে, আপনি ব্যাবসায় শুরুর কিছুদিনের মধ্যে আপনার প্রতিযোগী বাড়তে থাকবে। যখন প্রতিযোগী বাড়বে,তখন আপনার মুনাফার পরিমান দিনকেদিন কমে আসবে। তখন আপনি যে পন্য নিয়ে কাজ করছেন, সেটার পাশাপাশি আরেকটি নতুন পন্য নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। এককথায় ব্যাবসায়ের মাঝে নতুনত্ব আনতে হবে। নতুনত্ব না আনতে পারলে,বর্তমান বাজারে অনলাইন ব্যাবসায়ীদের টিকে থাকা সম্ভব নয়।
আপনাকে বাজারে টিকতে হলে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর নতুন কিছু আনতে হবে। পাড়া মহল্লায় সবধরনের দোকান থাকা স্বত্তেও দেখবেন বেশিরভাগ মানুষ দূরে বাজার থেকে পন্য কিনে আনে। যেমন উদাহরণস্বরূপঃ সয়াবিন তেল। সয়াবিন তেলের ওজন অনেক। আপনার মহল্লার দোকানের দামের সাথে বাজারের দামে তেমন তফাৎ থাকেনা। তবুও পাঁচ দশ টাকা কমে পাবে কিনা সেটা ভেবে, মানুষ ৩০ টাকা রিক্সাভাড়া দিয়ে বাজারে বড় মুদি দোকান থেকে কিনে আনে। সেখানে সেই ব্যাক্তির কাছে অনলাইনে পন্য বিক্রির চিন্তা করাটা অলীক স্বপ্ন ছাড়া কিছুনা।
আপনার আশেপাশে থাকা অনলাইন ব্যাবসায়ীদের দেখুন। তারা ভ্যারাইটিজ পন্য নিয়ে কাজ করছে। বাজারে সহজলভ্য নয়,এমন পন্য নিয়ে কাজ করছে। নতুবা তাদের ব্যাবসায় টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। যারা বাসে হকারের কাজ করে,তাদের দেখবেন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কিছু বিক্রি করে। শীতকালে কমলা আবার গরমকালে খিরাই।
এইভাবে অনলাইন ব্যাবসায় সফল হতে হলে আপনাকে ভ্যারাইটিজ আনতেই হবে।
আমাদের বাংলাদেশে অনলাইন ব্যাবসায় ভবিষ্যৎ কেমন?
আমাদের বাংলাদেশ পেক্ষাপটে অনলাইন ব্যাবসায় ভবিষ্যৎ প্রকৃতপক্ষে সুবিধাজনক নয়। উন্নত দেশে মানুষ সময়ের অনেক মূল্য দেয়। সুতরাং তারা অনলাইনে কেনাকাটা করতে সাচ্ছন্দ অনুভব করে। আমাদের দেশে একশো টাকার হ্যাডফোন কিনতে, দুইঘন্টা জ্যামে বসে, সাথে দুজন বন্ধুকে নিয়ে, মিরপুর থেকে গুলিস্তান চলে যাই। পার্থক্যটা এখানেই!
এছাড়া আমরা কোনকিছু দামাদামি করে কিনতে অধিক পছন্দ করি। বর্তমান বাংলাদেশে প্রায় সকল ব্যাবসায় সেক্টরে প্রচুর প্রতিযোগিতা রয়েছে। যেখানে অফলাইনে কেনাকাটায় এতো প্রতিযোগিতা, সেখানে অনলাইনে অসম্ভব।
আগেকার দিনে অনেকে বলতো, অনলাইনে যারা বিক্রেতা তাদের দোকানভাড়া প্রয়োজন হয়না। তাই তারা কমদামে বিক্রি করতে পারে। বাস্তবতা হলো,এখন ঘরে ঘরে অনলাইন ব্যাবসায়ী। প্রতিযোগিতা যেখানে ঘরেঘরে সেখানে দোকান ভাড়ার চিন্তাই আসেনা।
চাল ডাল নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য আমরা দোকানে গিয়ে দরদাম করে কিনতেই সাচ্ছন্দ অনুভব করি। যদিও লকডাউনে যেহেতু কিছু বিধিনিষেধ ছিল,সেহেতু কিছু বিক্রি বেড়েছিল। ইলেক্ট্রনিক পন্য আমরা বন্ধুবান্ধব নিয়ে মার্কেটে গিয়ে দেখেশুনে কিনতে পছন্দ করি। এখানেও কেউ অনলাইন ব্যাবসায় করে সফল হতে পারবেনা।
সহজ,পাঠাও,উবারের মতো রাইড শেয়ারিং প্লাটফর্ম যখন আমাদের এদেশে প্রথম আসে তখন ভেবেছিল সফল হবে। পরপর দুইদফা লকডাউনে যখন সকল পরিবহণ বন্ধ থাকে,তখন বাইকরা পেটের দায়ে এপ্স ছাড়া ভাড়ায় চলতে শুরু করে। তারপর লকডাউন তুলে দেয়ার পরেও তাদের এই অভ্যাস থেকে যায়। এখনকার দিনে বেশিরভাগ মানুষই এপ্সের চেয়ে,চুক্তিতে চড়তে পছন্দ করেন। যারকারনে রাইড শেয়ারিং এপ্স কোম্পানির আয় এখন কমতির দিকে আছে।
আপনার সকল আধুনিক ধারনাই সে সফল হবে,সেটা কিন্তু নয়। যে ব্যাক্তি ব্লুটুথ হ্যাডফোনের ধারনা নিয়ে এসেছিল,উনি কি ভাবতে পেরেছিল, এই ব্লুটুথ হ্যাডফোনে বাজারে এইভাবে ধস নেমে আসবে! বাজারে এখন একশো দেড়শো টাকায় ব্লুটুথ হ্যাডফোন পাওয়া যায়। যেগুলা অনায়াসে তিন চার ঘন্টা ব্যাটারি বেকাপ দেয়।
আমাদের এদেশে দিনকেদিন বেকারত্ব বাড়ছে। যারকারনে অনলাইন ব্যাবসায়ে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। এই ব্যাবসায় আপনাকে করতে হলে এটা ভাবতে হবে যে, এটা কোন চিরস্থায়ী ব্যাবসা নয়। আপনি যে আইটেম নিয়ে ব্যাবসা করতে চাচ্ছেন সেটি ছয়মাস বা বছরখানেক পরে অন্য কোন ব্যাবসায় শিফট করতে হতে পারে। অনলাইন ব্যাবসায়ে সফল হওয়ার জন্য আপনাকে বাজারে নতুন কোন পন্য নিয়ে কাজ করতে হবে। দোকানে বা মার্কেটে হাতের কাছে পাওয়া যায়,এমন কোন পন্য নিয়ে কাজ করলে হবেনা। শুরুর দিকে পন্যে মুনাফার পরিমাণ বেশি থাকে। তারপর যত প্রতিযোগী আসবে,তত মুনাফা কমতে থাকবে। সামগ্রিকভাবে চিন্তা করলে আমাদের বাংলাদেশে অনলাইন ব্যাবসায় আশাব্যঞ্জক নয়।
আশাকরি আমাদের আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনার যে তথ্য জানার প্রয়োজন ছিল সেটি জানতে পেরেছেন। কোন জানার বা মন্তব্য থাকলে মন্তব্য করতে পারেন। স্মার্টফোন বিষয়ক নিত্যনৈমিত্তিক অনেকে অজানা তথ্য আমাদের এই সাইটে আপনি পাবেন। নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের Facebook Page লাইক দিয়ে এক্টিভ থাকুন। সাইটের নিচের অংশে আমাদের ফেইসবুক পেইজ দেয়া আছে। সেখানে স্মার্টফোন সম্পর্কিত নিয়মিত নিত্যনতুন আরো অজানা তথ্য জানতে পারবেন।