ওয়াইফাইয়ের দিন শেষ বাজারে আসছে লাইফাই

ওয়াইফাইয়ের দিন শেষ বাজারে আসছে লাইফাই

ওয়াইফাইয়ের তুমুল জনপ্রিয়তার দিন,এবার শেষ হতে চলল। তবে ভয়ের কোন কারণ নেই, আসছে এর থেকেও সহজ ও উন্নত ওয়্যারলেস প্রযুক্তি লাইফাই। যা ওয়াইফাইয়ের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। এখন থেকে বলা হচ্ছে, ৪ গিগাবাইট স্টোরেজের একটি সিনেমা ডাউনলোড করতে সময় লাগবে মাত্র কয়েক সেকেন্ড। তাও আবার একটি বৈদ্যুতিক বাতির তলায় দাঁড়ালেই! বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এমনই এক প্রযুক্তি আসছে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে বড় স্টোরেজের গেম, সিনেমা সবই ডাউনলোড হবে চোখের পলকে। যার ইন্টারনেট স্পিড হবে বুলেট গতির।

লাইফাইয়ের পূর্ণরূপ ইংরেজি করলে দাড়ায় (Light Fidelity) যার উচ্চারণ লাইট ফাইডেলিটি। অনুমানিক ২০১১ সালে স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের জার্মান বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী হ্যারল্ড নামের একজন ব্যাক্তি প্রথম ‘লাইফাই’ ইন্টারনেট প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন। এই প্রযুক্তিতে আলোর মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তিটি দৃশ্যমান আলোক তরঙ্গকে যোগাযোগ মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে। যেখানে ওয়াইফাইয়ে ব্যবহৃত হয় অদৃশ্য বেতার তরঙ্গ। যা ওয়াইফাইয়ের তুলনায় অধিক শক্তিশালী যাবে।

লাইফাই ওয়াইফাইয়ের তুলনায় বেশি ব্যান্ডউইথ, ব্যবহারের সহজতা, দক্ষতা এবং সুরক্ষার মতো অনেক বেশি সুবিধা দেয়। তাই এই প্রযুক্তি একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলের উচ্চ গতির ওয়্যারলেস যোগাযোগের জন্য সবচেয়ে উপযোগী হতে পারে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, লাইফাই নামক এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্ট্রিট লাইট থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের অটোমেটিক প্রযুক্তির গাড়িও হেডলাইটের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে। আলোর গতি যেহেতু অনেক দ্রুত তাই এ ব্যবস্থায় তথ্য আদান-প্রদানের গতিও খুব দ্রুত হয়। একইসঙ্গে ঘরে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী প্রযুক্তি হতে পারে লাইফাই। ভবিষ্যতে হয়তো দেখা যাবে, বাসায় ব্যবহৃত এলইডি লাইট একই সঙ্গে ঘরকে আলোকিত করছে এবং একইসাথে পাশাপাশি ঘরের ভেতরে লোকাল নেটওয়ার্ক তৈরিতে অবদান রাখছে,যা এখনকার যুগের হিসেবে অবিশ্বাস্য। এমনকি বাড়ির প্রতিটি বৈদ্যুতিক বাতিকেই লাইফাই প্রযুক্তির রাউটার হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। যা এখনকার মানুষের জন্য কল্পনাতীত।

★ জেনে নিন, লাইফাই প্রযুক্তি কী?

ওয়াইফাইয়ের মতোই লাইফাই একটি ওয়্যারলেস যোগাযোগ প্রযুক্তি। এটি ভবিষ্যতে বহুল ব্যবহৃত ওয়্যারলেস যোগাযোগ প্রযুক্তিগুলোর একটি হয়ে উঠবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এ প্রযুক্তির মূল বৈশিষ্ট্য হলো পুরোপুরি নেটওয়ার্কযুক্ত, দ্বিপাক্ষিক এবং উচ্চ গতির ওয়্যারলেস কানেকশন।

আজকাল ওয়্যারলেস যোগাযোগের সর্বাধিক ট্রেন্ডিং ডোমেন হলো ওয়াইফাই। প্রতি বছর এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। অতিরিক্ত চাপ সামলাতে দেশের আইএসপি নিয়ে গ্রাহকদের রয়েছে অনেক অভিযোগ। এইসব অভিযোগ দূর করতে আসছে,লাইফাই ইন্টারনেট। এরচেয়েও উচ্চগতি, দক্ষতা, ব্যান্ডউইথ প্রাপ্তির সুবিধা থাকবে লাইফাইয়ে।

★ কিভাবে কাজ করে লাইফাই?

এ প্রযুক্তির মাধ্যমে এলইডি বাতি ব্যবহার করে সহজেই ডেটা আদান-প্রদান করা যাবে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, এমনকি হাতের মুঠোফোনটিতেও। লাইফাইয়ের ডেটা ট্রান্সমিশন রেঞ্জ ওয়াইফাইয়ের চেয়ে ১০০ গুণ দ্রুত। এ প্রযুক্তিতে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ২২৪ গিগাবাইট পর্যন্ত তথ্য প্রেরণ করা যায়, যেখানে ওয়াইফাইয়ের সর্বোচ্চ গতি প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৬০০ মেগাবাইট। তবে এ প্রযুক্তির একটি উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। আলো কোনো দেয়াল ভেদ করে যেতে পারে না। ফলে যে ঘরে লাইফাই নেটওয়ার্ক রয়েছে সে ঘরটি ত্যাগ করলেই গ্রাহক ইন্টারনেট সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তবে একে লাইফাইয়ের সীমাবদ্ধতা হিসাবে নয়, সুবিধা হিসাবেই দেখছেন অনেকে। এর ফলে আবদ্ধ একটা জায়গাতে সীমাবদ্ধ থাকবে সিগন্যাল। আলোর মাধ্যমে সম্প্রচারিত ডেটা অনেক বেশি নিরাপদ থাকবে। পাসওয়ার্ড চুরি করে আর কেউ সেটা ব্যবহার করতে পারবে না।

★ লাইফাইয়ের ব্লক ডায়াগ্রাম কি?

লাইফাই সিস্টেমে মূলত দুটি অংশ থাকে। ট্রান্সমিটার ও রিসিভার। ট্রান্সমিটার বিভাগে ইনপুট সিগন্যালটি নির্দিষ্ট সময়ের সঙ্গে মডিউল করা যায়। তারপর ০ ও ১ এর আকারে এলইডি বাল্ব ব্যবহার করে ডেটা প্রেরণ করে। এখানে এলইডি বাল্বের আলোকে ০ এবং ১ এর সঙ্গে বোঝানো হয়েছে। রিসিভার প্রান্তে এলইডি আলো গ্রহণের জন্য একটি ফটোডায়োড ব্যবহার করা হয় যা সিগন্যালটিকে আরও শক্তিশালী করে এবং আউটপুট দেয়। অন্যদিকে, রিসিভার প্রান্তে ফটোডায়োডের পাশাপাশি এমপ্লিফায়ারও থাকে। এখানে, ফটোডায়োড এলইডি বাল্ব আলোকে গ্রহণ করে বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তরিত করে। শেষে অ্যামপ্লিফায়ার ফটোডায়োড থেকে সংকেত গ্রহণ করে এবং তার থেকে বেশি শক্তিশালী আউটপুট দেয়।

★লাইফাই কিভাবে কাজ করে?

লাইফাই অনেকটা ওয়াইফাই সিগন্যালের মতো করে কাজ করে। তবে এটা কিছুটা ভিন্নভাবে ডাটা ট্রান্সফার করে। লাইফাই আলোর মাধ্যমে ডাটা ট্রান্সফার করে থাকে। যা ওয়াইফাইয়ের তুলনায় অনেক বেশি দ্রুত ডাটা ট্রান্সফার করতে সক্ষম।

★ লাইফাই এবং ওয়াইফাইয়ের মধ্যকার প্রার্থক্য?

লাইফাই বৈদুৎতিক বাতির মাধ্যমে ডাটা ট্রান্সফার করে থাকে। অন্যদিকে ওয়াইফাই নির্দিষ্ট রাউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেট ডাটা ট্রান্সফার করে। লাইফাই ইন্টারনেট স্পিড, ওয়াইফাইয়ের তুলনায় অনেক দ্রুতগতির হবে। যার ইন্টারনেট স্পিড হবে বাফারলেস।

লাইফাই নিয়ে আপনাদের মনে যত প্রশ্ন ছিল সেগুলা আজ জানতে পেরেছেন। আশাকরি আমাদের আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনার যে তথ্য জানার প্রয়োজন ছিল সেটি জানতে পেরেছেন। কোন জানার বা মন্তব্য থাকলে মন্তব্য করতে পারেন। স্মার্টফোন বিষয়ক নিত্যনৈমিত্তিক অনেকে অজানা তথ্য আমাদের এই সাইটে আপনি পাবেন। নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের Facebook Page লাইক দিয়ে এক্টিভ থাকুন। সাইটের নিচের অংশে আমাদের ফেইসবুক পেইজ দেয়া আছে। সেখানে স্মার্টফোন সম্পর্কিত নিয়মিত নিত্যনতুন আরো অজানা তথ্য জানতে পারবেন।