![]() |
ইভ্যালি যেকারনে ব্যার্থ ইকমার্স প্রতিষ্ঠান |
বাংলাদেশে খুব সল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হওয়া ইকমার্স প্লাটফর্ম ইভ্যালি। ইভ্যালির মতো কেউ এত সল্প সময়ে ইকমার্স প্লাটফর্মে সারা ফেলতে পারেনি। যদিও সল্প সময়ে ব্যাপক সারা ফেলে, আবার সল্প সময়েই ব্যাবসা গুটিয়ে বন্ধ হওয়ার পথে ইভ্যালি। আমাদের বাংলাদেশে সাম্প্রতি জনপ্রিয় অনলাইন শপিং প্রতিষ্ঠানগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাজার ইভ্যালির মতো অনলাইন শপিং সাইট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। যত দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে তার চেয়ে দ্রুত জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। শুধুমাত্র ইভ্যালি নয়। ইভ্যালির পর ই অরেঞ্জ, ধামাকা শপিং সাইটের মতো প্রতিষ্ঠান যেভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ঠিক তেমনি জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। তাহলে আমাদের বাংলাদেশ কি ই কমার্স ব্যাবসায়ের জন্য উপযুক্ত নয়? নাকি যারা সুনাম ক্ষুন্ন করেছে,তাদের ব্যাবসায়ীক নীতিতে কোন দূর্বলতা ছিল? এটাই হবে আমাদের আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয়।
আমাদের বাংলাদেশে ইভ্যালিই কি প্রথম অনলাইন শপিং শুরু করেছে? নাকি আগেও অন্য কোন প্রতিষ্ঠান ছিল? ইভ্যালির আগেও আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি ইকমার্স প্লাটফর্ম ছিল। যারা এখনো সুনামের সাথে ব্যাবসা করে যাচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশে দারাজ একটি জনপ্রিয় ইকমার্স সাইট। যারা প্রতিদিন অনেক অনেক পন্য বিক্রি করে। এমনকি দারাজে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অফার দিয়ে থাকে। তাহলে ইভ্যালি টিকতে পারেনি কেন?
আমরা জাতি হিসেবে লোভী। যেখানে অফার দেখি সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়ি। একারনে আমাদের দেশে যারাই ইকমার্স বিজনেস নিয়ে আসে, শুরুতে বেশি ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্য অস্বাভাবিক অফার দেয়। এই অস্বাভাবিক অফার একসময় কাল হয়ে দাড়ায়। ইভ্যালি, ইঅরেঞ্জ, ধামাকা শপি সাইটের মতো প্রতিষ্ঠান বেশি ক্রেতা আকর্ষণের জন্য অস্বাভাবিক অফার দিতো। যারা তাদের কাছ থেকে ঠিকঠাক পন্য পেয়েছে, এখন সেসব ইকমার্স সাইটের বিপদেই তারা হাসিঠাট্রা করছে। আমাদের দৃষ্টিতে আমাদের বাংলাদেশে যারা ইকমার্স বিজনেস করতে উদ্যোগ নেয়, তাদের ব্যাবসায় পলিসিতেই ভুল আছে। ইভ্যালি থেকে মানুষ পন্য কিনতো কেন? কারন ইভ্যালি ব্যাপক ছাড় দিয়ে পন্য বিক্রি করতো তাই। মনে রাখা উচিৎ, যারা আপনার কাছ থেকে অস্বাভাবিক ছাড় পেয়ে পন্য কিনে, তারা আপনার প্রকৃত ক্রেতা নয়। আপনি যখন ছাড় দেয়া বন্ধ করে দিবেন,তারা তখন অন্যদিকে ছুটবে। আপনার চেয়ে অধিক পরিমান ছাড় যখন কেউ দিবে,তখন তারা সেদিলে ছুটবে।
ইভ্যালির অস্বাভাবিক ছাড়ের অপশনটা বা এই বিজনেস পলিসি দীর্ঘদিন চালু রাখা উচিৎ হয়নি। অন্যদিকে হিসেব করলে, এটা চালু রাখার বিকল্প ছিলনা। কারন অফার না দিলে তো বিক্রি কমে যেতো। আর যে প্রতিষ্ঠান ছাড়ে পন্য বিক্রি করে কাস্টমার বৃদ্ধি করে, তাদের ব্রান্ড ভ্যালু তেমন থাকেনা। যতই গ্রাহক বৃদ্ধি হোকনা কেন, প্রকৃতপক্ষে তাদের ব্রান্ড ভ্যালু তেমন নেই। ব্রান্ড ভ্যালু আছে, তখনই বোঝা যাবে,যখন কোন প্রতিষ্ঠানের বিপদে গ্রাহক তাদের সাপোর্ট দিবে। ইভ্যালির এই দূসময়ে যারা ইভ্যালি থেকে ৪০ হাজার টাকার ফ্রিজ ২০ হাজারে কিনেছিল, তারাও এখন ইভ্যালিকে নিয়ে টিটকারি মারতে ছাড়েনা। কারন তারা কখনোই ইভ্যালির প্রকৃত কাস্টমার ছিলনা। প্রকৃত কাস্টমার বাড়াতে না পারলে ব্রান্ড ভ্যালু বাড়েনা।
ইভ্যালি যে বিজনেস পলিসতে এদেশে ব্যাবসায় করতে চেয়েছিল সেটি আমাদের দেশের জন্য উপযুক্ত নয়। এমনকি তাদেরও কিছুটা ভুল ছিল। নতুবা দারাজ, আলিবাবার মতো প্রতিষ্ঠান ইকমার্স বিজনেস করে আছে। তাদের তো তেমন সমস্যা হচ্ছেনা। ঠিক ইভ্যালির পলিসিকে নকল করে,সামান্য এদিকওদিক করে বিজনেস করে আসছিল ইঅরেঞ্জ,ধামাকা শপের মতো ইকমার্স প্লাটফর্ম। তাদের গতিও এখন ইভ্যালির মতোই।
আমরা চাই,আমাদের বাংলাদেশে ইকমার্স প্লাটফর্ম গড়ে উঠুক। মানুষ ইকমার্স সাইটে কেনাকাটায় অভ্যাস্ত হোক। তবে সেটা অফারের লোভে পড়ে নয়।
এছাড়া কিছু প্রতারক ইকমার্স সাইট আছে,যারা অধিক অফারের লোভ দেখিয়ে পন্য মূল্যের দ্বিগুন টাকা জমা নিয়ে, তারপর পন্য হাতে পাবে এমন শর্তে বিজনেস করতো। ফলে অনেক সহজসরল ক্রেতা লোভের বশবর্তী হয়ে সবকিছু হারিয়েছে। ইকমার্স ব্যাবসায়ে এই দূরবস্থার জন্য যে, শুধুমাত্র ইকমার্স প্রতিষ্ঠান দায়ী সেটা কিন্তু নয়। এটার জন্য আমাদের লোভ দায়ী।
তাছাড়া আমরা কোনকিছুতে অফার বা ছাড় না পেলে অনলাইন কেনাকাটায় ততটা উৎসাহ দেখাই না। তাই এইসুযোগে ইভ্যালি ও ইঅরেঞ্জের মতো সাইটগুলো বিশাল ছাড়ের লোভ দেখিয়ে পন্য বিক্রি করে,এখন শেষের পথে। আমরা সাধারন গ্রাহক হিসেবে না যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খুচরা দোকানদার। কিভাবে?
ইভ্যালি যখন সাইক্লোন অফার দিতো তখন আমরা সাধারণ গ্রাহক যতটা না ক্রয় করতাম, তার চেয়ে বেশি খুচরা দোকানদার পন্য ক্রয় করতো। অনেক মোবাইল ফোনের দোকানদার আছে,যারা ইভ্যালির থেকে কমদামে ফোন কিনে বিক্রি করতো। এছাড়া অনেক টিভি ফ্রিজের খুচরা দোকানদার, যারা অফিশিয়াল ডিলার নয়, তারা ইভ্যালি থেকে টিভি ফ্রিজ ক্রয় করে বিক্রি করতো। অনেকে আবার ইঅরেঞ্জ বা ধামাকা শপিং সাইটের মতো সাইট থেকে পন্য কি খুচরা বিক্রি করতো। ইভ্যালির মতো সাইট থেকে পন্য কিনে অনেক খুচরা দোকানদার যেমন অল্প সময়ে লাভবান হয়েছে, ঠিক তেমনি আবার অনেকে আজ পথের ভিখারি হয়েছে। অনেক মোবাইল বা ইলেক্ট্রনিক্স পন্যের দোকানদার ইভ্যালি, ইঅরেঞ্জ,ধামাকা শপিং এই ধরনের সাইটে অগ্রিম হাজার হাজার টাকা জমা দিয়ে,এখন তারা পথের ভিখারি। কোনকিছুতেই অধিক লোভ ভালোনা। কোন প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি ছাড় পেলে পন্য ক্রয় করা উচিত নয়। আপনি হয়তো লাভবান হচ্ছে, শেষপর্যন্ত কেউ একজন বিশাল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেই ক্ষতিগ্রস্যের দায় যদিও সরাসরি আপনার উপর বর্তাবে না কিন্তু আপনি তাদের সাইট থেকে পন্য কেনার ফলে তারা আরো বেশি উৎসাহিত হবে। ইকমার্স ব্যাবসায়ের এই গলাকাটা নীতিতে আমাদের সমর্থন দেয়া উচিৎ নয়।
আশাকরি আমাদের আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনার যে তথ্য জানার প্রয়োজন ছিল সেটি জানতে পেরেছেন। কোন জানার বা মন্তব্য থাকলে মন্তব্য করতে পারেন। স্মার্টফোন বিষয়ক নিত্যনৈমিত্তিক অনেকে অজানা তথ্য আমাদের এই সাইটে আপনি পাবেন। নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের Facebook Page লাইক দিয়ে এক্টিভ থাকুন। সাইটের নিচের অংশে আমাদের ফেইসবুক পেইজ দেয়া আছে। সেখানে স্মার্টফোন সম্পর্কিত নিয়মিত নিত্যনতুন আরো অজানা তথ্য জানতে পারবেন।